
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
লালমনিরহাট নেছারিয়া কামিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাওঃ মোসলেম উদ্দিনকে ঘিরে প্রশাসনিক জটিলতা ও আইনি টানাপোড়েন নতুন করে আলোচনায় এসেছে। ইস্তফার পর দুর্নীতির মামলা, হাইকোর্টে রিট ও আপিল এবং পরবর্তীতে পুনরায় পদে ফেরার প্রচেষ্টা নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
নথি অনুযায়ী, মাওলানা মোসলেম উদ্দিন ০৭ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে স্বেচ্ছায় অধ্যক্ষ পদ থেকে ইস্তফা প্রদান করেন। তার ইস্তফা গৃহীত হওয়ার পর মাদরাসা পরিচালনা কমিটি ১৯/০৮/২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত সভায় মোঃ রফিকুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করে। পরবর্তীতে ৩০/১০/২০২৪ তারিখে ওই সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়।
কিন্তু ইস্তফার কয়েক মাস পর মোসলেম উদ্দিন পুনরায় পদে যোগদানের চেষ্টা শুরু করলে মাদরাসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নতুন করে বিরোধের সূত্রপাত ঘটে। অভিযোগ ওঠে, তিনি ইস্তফার পরও প্রশাসনিক কাজে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছেন এবং ব্যাংক ও তহবিল সংক্রান্ত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছেন।
এ প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয় এবং তদন্ত শেষে ১১ মার্চ ২০২৫ তারিখে লালমনিরহাট সদর থানায় মামলা নং ২৪/২৬ দায়ের করা হয়। মামলাটিতে দুর্নীতি, তহবিল অপব্যবহার, ব্যাংক জালিয়াতি ও চাকরি বাণিজ্যের অভিযোগ আনা হয়। মামলা বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
পরবর্তীতে মোসলেম উদ্দিন রিট পিটিশন নং ২৭১৩/২০২৫ দাখিল করে হাইকোর্টে স্বেচ্ছায় ইস্তফা প্রত্যাহারের আবেদন জানান। আদালত প্রাথমিক শুনানির পর বিষয়টি আপিল বিভাগে গড়ায়। সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল নং ১৮৫০/২০২৫ মামলায় আপিল বিভাগ ২২ মে ২০২৫ তারিখে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন। ফলে তার পুনরায় পদে ফেরার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন কিন্তু
মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর পৃথকভাবে আদেশ জারি করে জানান, মোসলেম উদ্দিনকে বেতন দিতে হবে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাসেল মিয়া গত আগস্ট মাসের বেতন শীটে স্বাক্ষর করেন ও হাইকোর্টের আপিল বিভাগের স্থগিত আদেশকে পাশ কাটিয়ে তখনই জটিলতা দেখা দেয়।
বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম বলেন, “আদালতের নির্দেশ স্পষ্ট—মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কেউ স্বেচ্ছায় ইস্তফা দেওয়া পদে পুনরায় যোগ দিতে পারবেন না। মাদরাসার শৃঙ্খলা ও সুনাম রক্ষার স্বার্থে আমরা আদালতের নির্দেশ মেনে চলছি।” আবার গোপনে মাদ্রাসার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা রফিকুল ইসলাম এবং সাবেক ইস্তফা প্রদানকারী অধ্যক্ষ মোসলেম উদ্দিনসহ যোগসাজস করে বর্তমান সভাপতি কে পাস কাটিয়ে সম্পূর্ণ বেআইনি এবং অবৈধভাবে একটি এডহক কমিটি গঠন করার পায়তারা করতেছে।
এ বিষয়ে বর্তমান কমিটির সভাপতি দুলাল হক কে ফোন দিলে তিনি বলেন আরবি বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিদপ্তর থেকে আমাকে সভাপতি মনোনয়ন দিয়েছেন আমি বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওঃ রফিকুল ইসলামকে মিটিং আহ্বান করার জন্য নোটিশ প্রদান করি। তিনি তার কোন জবাব না দিয়ে কমিটি ভেঙ্গে দেওয়ার পাঁয়তারা করতেছে।
অন্যদিকে শিক্ষক ও অভিভাবকরা বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে এই দ্বন্দ্বে মাদরাসার শিক্ষা পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দ্রুত প্রশাসনিক নিষ্পত্তি প্রয়োজন।”
নথি অনুযায়ী, বর্তমানে মামলাটি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন এবং মাওলানা মোসলেম উদ্দিনের পুনর্বহাল প্রক্রিয়া কার্যত স্থগিত রয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আদালতের চূড়ান্ত রায় না আসা পর্যন্ত তার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণযোগ্য নয়।
সব মিলিয়ে, নেছারিয়া কামিল মাদরাসায় এই অধ্যক্ষ পদ-সংক্রান্ত বিরোধ এখন স্থানীয় সমাজে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।