আব্দুস সামাদ, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় অবৈধ বালু উত্তোলনে প্রভাবশালী বালু খেকোদের সিন্ডিকেট চক্র বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ব্যবসায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করায় বৈধ ইজারাপ্রাপ্ত মৌজায় অনুমতি না থাকায় সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব। ফলে দিন দিন প্রশাসনিক তদারকির ঘাটতির কারণে অবৈধ বালু উত্তোলন যেন এক মহোৎসবে পরিণত হয়েছে।
উপজেলার প্রায় ৮০-৯০ টি পয়েন্ট এ অসংখ্য অবৈধ ব্যবসায়ী বিপুল পরিমাণ অবৈধ পাথর বালু মজুদ করে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। প্রভাবশালীদের পকেটে যাচ্ছে এই অবৈধ অর্থ ফলে দিন দিন সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব।
উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্ট এ খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ধরলা নদী জিরোপয়েন্ট, ঘাটের পাড়, বেলতলী, ধবলসতী, পেদিরবাড়ী, কাউয়ামারী,
মাশানটারী, কাঁঠালতলী, বটতলী, বাংলাবাড়ী, কাফির বাজার, সরেঅ-বাজার, মির্জারকোট, মুন্সিরহাটসহ বিভিন্ন স্হানে দিনরাত চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন ও পরিবহন।
নদীর তীর থেকে এই অবৈধ বালু বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ট্রাক ও ট্রলির মাধ্যমে পরিবহন করে মহাসড়কের পাশে স্তুপ করে রাখা হয়। পরে এসব বালু এই সিন্ডিকেট চক্রের মাধ্যমে ট্রাকবোঝাই করে বিক্রি হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
একেকটি ট্রাকে প্রায় এক হাজার ঘনফুট বালু বহন করা হয়। বাজারে বালু ট্রাক প্রতি বিক্রি হয় আট হাজার টাকা, সেই সাথে লোড খরচ বাবদ গুনতে হয় ৫০০ টাকা।
সরেজমিনে হিসাব করে দেখা যায়, উপজেলার এসব যায়গায় প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার অবৈধ বাণিজ্যে হাতবদল হচ্ছে।
স্হানীয়রা জানায়, নদী ও আবাদী ফসলি জমি থেকে প্রতিদিন শত শত ট্রলি থেকে বালু উত্তোলন ও পরিবহনে উপজেলার বিভিন্ন স্হানে নদীর গতিপথ বেঁকে যাওয়া, আবাদি জমি নষ্ট হওয়াসহ গ্রামীণ সড়ক ভেঙে যায় ফলে জীবনযাত্রার মান খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
মহাসড়কের পাশে বালু ট্রাক লোডের কারণেও দিন দিন মৃত্যুর সংখ্যা আনুপাতিক হাড়ে বেড়েছে বলে মনে করছেন।
খনিজ সম্পদ মন্রণালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী, নদী থেকে পাথর বালু উত্তোলনে কঠোর নীতিমালা থাকলেও পাটগ্রামে তা বালু খেকোদের সিন্ডিকেট বাণিজ্যের কারণে কার্যত তা ব্যাহত হয়ে পড়ে।
নির্দিষ্ট ইজারা ছাড়াই বালু উত্তোলন ও পরিবহনে ইজারাদারদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে, সরকার বৈধতা দেয়ার পরও প্রশাসনিক কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।
বৈধ ইজারাপ্রাপ্তরা বলেন, উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী প্রশাসনের সহযোগিতায় লাগামহীন ভাবে বৈধ ইজারা মৌজা দখল করে নিয়ে দিনরাত বালু উত্তোলন করে আসতেছে, আমাদের বৈধ কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে এসব সিন্ডিকেট বেপরোয়া হয়ে পড়েছে।
উপজেলা প্রশাসনের কাছে গেলেও কোন সুরাহা মিলছে না, তারা নামমাত্র অভিযান চালিয়ে জনগণকে ধোঁকা দিচ্ছে। এতে বিপুল অংকের ইজারা মূল্য, রাজস্ব, ও ভ্যাট প্রদান করেও আমরা বিপুল পরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকার হচ্ছি। তাই বৈধ ইজারাপ্রাপ্ত মৌজার পাথর, বালু উত্তোলনের স্থগিত কার্যক্রম পুনরায় চালু করার জন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি ও সরকারের রাজস্ব আদায় যেন ব্যাহত না হয় সে জন্য প্রশাসনকে পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ বিষয়ে পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার উত্তম কুমার দাশ বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও পরিবহন বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে এবং নিয়মিত অভিযান চলছে।