হাতীবান্ধা (লালমনিরহাট)প্রতিনিধিঃ লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ওয়াশ ব্লক প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠ
পিইডিপি-৪ (প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি-৪) এর অর্থায়নে হাতীবান্ধা উপজেলায় ৭৯টি ওয়াশ ব্লক নির্মাণের কাজ চলমান। প্রতিটি ওয়াশ ব্লকের জন্য ১৬ থেকে ১৮ লাখ টাকা ধরা হলেও প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৩ কোটি টাকা। শিক্ষার্থীদের জন্য আধুনিক টয়লেট, হাত-মুখ ধোয়ার ব্যবস্থা, অজুখানা, প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা শৌচাগারসহ নানা সুবিধা রাখার কথা থাকলেও বাস্তবে নিম্নমানের কাজে ক্ষোভ ছড়িয়েছে এলাকায়।
সরেজমিনে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, সিডিউলে উল্লেখিত এক নম্বর ইটের পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে তিন নম্বর ইট। ঢালাইয়ের কাজে পরিমাণে কম সিমেন্ট, উন্নতমানের খোয়ার পরিবর্তে রাবিশ ও নিম্নমানের খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেক স্থানে মাটি-বালির ওপরে বেজ ঢালাই দেওয়া হয়েছে। এমনকি বেশকিছু স্থানে কম রড ব্যবহার ও হেবী প্লাস্টিক ডোরের পরিবর্তে টিনের দরজা বসানো হয়েছে। প্লাস্টারের কাজ শেষ হলেও নিয়ম অনুযায়ী পানি দিয়ে ভিজানো হচ্ছে না। উত্তর পারুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ একাধিক প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের অনিয়ম ধরা পড়েছে।
উত্তর পারুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের
শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, “ঠিকাদাররা ভালো মানের সামগ্রী ব্যবহার করছে না। আমরা বারবার বাধা দিলেও তারা শোনে না।”
স্থানীয় মোবারক আলী অভিযোগ করেন, “ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মিলে বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ করছে। নিম্নমানের কাজের কারণে এসব ভবন এক-দুই বছরের মধ্যেই ভেঙে পড়তে পারে।” অনেক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সহ-সভাপতি জানান, কাজের শুরু থেকেই অনিয়ম চলছে। প্রায় সময়ে কাজ বন্ধ থাকলেও পরে জোর করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ ওয়াহেদ আলী বলেন, “ওয়াশ ব্লকের কাজে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে। আমরা বারবার অভিযোগ করলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভাবে কাজ করা হচ্ছে, যা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।”
অভিযোগের বিষয়ে হাতীবান্ধা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মোঃ রাসেল মিয়া বলেন, “ঠিকাদাররা নিয়ম মেনেই কাজ করছে, অভিযোগ সঠিক নয়।”
এদিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও অভিভাবকরা জানান, সরকারি অর্থে নিম্নমানের কাজ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ বিষয়ে দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান।