এবি সিদ্দিক, পাটগ্রাম (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি।
পাটগ্রামে বিএনপি কর্মীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় থানায় হামলাকারীদের ছাড় না দেওয়ার ষোষণা রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম'র।
বুধবার (২ জুলাই) রাতে পাটগ্রাম থানায় সংঘর্ষের ঘটনায় ৩ জুলাই দুপুরে পাটগ্রাম থানা পরিদর্শনে এসে এসব কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, আমাদের পুলিশ সদস্যদের আহত করা হয়েছে। আসামী ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। সুতরাং দুষ্কৃতিকারীর কোনো দলীয় পরিচয় নেই। সে দলেরই হোক তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে দোষীদের চিহ্নিত করবো বলে জানান তিনি। এসময় লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার, লালমনিরহাট পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলামসহ আরও অনেক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসক বলেন, পাথর-বালু কোয়ারী ইজারাদারেরা নির্দিষ্ট স্থান থেকেই নিয়ম মেনে তুলতে পারবে। কিন্তু বাইরে ব্যানার টাঙ্গিয়ে, রশিদ করে, বাঁশ দিয়ে গাড়ি থামিয়ে চাঁদা তোলার সঙ্গে কোয়ারীর কোনো সম্পর্ক নেই, এটা ভিত্তিহীন।
যদিও স্থানীয় পাথর বালু ইজারাদার পৌর যুবদল নেতা মাহমুদ হোসেন রাব্বী ঘটনার দিন রাতেই ফেসবুক লাইভে এসে টাকা নেওয়াকে বৈধ দাবি করে ওসি মিজানুর রহমানের শাস্তির কথা তুলে বলেন, তারা পাটগ্রাম উপজেলার নয়টি মৌজা টেন্ডারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে নির্বাচিত হয়ে সরকারের কাছ থেকে ইজারা নিয়েছেন। আমাদের কাছে চাঁদা/ঘুষ চেয়েছিল, দেইনি জন্য এমনটা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। পরে ৩ জুলাই দুপুরে পাথর-বালু মহলের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে আবারও দাবি করে রাব্বি জানান, আমরা নিয়ম অনুযায়ী করছি, কিন্তু ওসি ও ইউএনও ১৫ লক্ষ টাকা ঘুষ দাবি করলে তা পরিশোধ না করায় আমাদের দু'জন কোয়ারী কর্মীকে আটক করে তারা। পরে আমরা খোঁজ নিতে গেলে পুলিশ আগে হামলা চালায় বলে দাবি করেন তিনি।
এবিষয়ে পাটগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমান জানান, থানায় হঠাৎ আক্রমনের ঘটনা ঘটলে পুলিশ টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে তারা থানার ভিতরে ঢুকে ল্যাপটপ, চেয়ার, টেবিলসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামাদি নষ্ট করে দেয়। এসময় ৮ জন পুলিশ আহত হয়েছে বলে জানান তিনি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
জানা যায়, বুড়িমারী-রংপুর মহাসড়কে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে বিএনপির দু'জন কর্মীকে আটক করে এক মাসের সাজা দেয় পাটগ্রাম উপজেলা প্রশাসন। পাটগ্রামের অ-বাজার এলাকা থেকে রাতে বেলাল ও সোহেল নামে দু'জনের কাছে ১ লাখেরও অধিক টাকার রশিদসহ আটক করেন বলে জানান পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাস।
পাটগ্রাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি সফিকার রহমানের কাছ থেকে জানা যায়, পাটগ্রাম থানায় এই দু'জনকে নিয়ে যাওয়ার খবরে বিএনপির কর্মী ও সমর্থকেরা ক্ষোভ প্রকাশের এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এবং ঘটনাস্থলে তোপের মুখে ওই দু'জন মুক্ত হয়। গ্রেফতার ও সাজার ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে পর্যায়ক্রমে বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার হাসান রাজিব প্রধান, বাদশা জাহাঙ্গীর মোস্তাজির চপলসহ কয়েকজন নেতাকর্মীর সঙ্গে পুলিশের কথা কাটাকাটি হয়। মুলত গ্রেফতারের ঘটনায় অস্থিরতা তৈরী হলে এক পর্যায়ে সংঘর্ষে রুপ নেয়। এসময় গুরুতর আহত বিএনপি নেতা চপলসহ প্রায় ১৫ জনের মতো চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রকাশক ও সম্পাদক : জিল্লুর রহমান
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত