এবি সিদ্দিক, পাটগ্রাম (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি।।
পাটগ্রাম উপজেলার শিক্ষা অফিসার জ্যোতির্ময় চন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে প্রায় অর্ধশত শিক্ষকের কাছ থেকে বরাদ্দকৃত স্লীপ’র অর্থ কর্তনের তথ্য পাওয়া গিয়েছে। আর এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে তারই অফিস সহায়ক জসিম আলী।
২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে (জানুয়ারী-জুন) বিদ্যালয় প্রতি বিভিন্ন কাজের ১৫ হাজার ৭৫৫ টাকার স্বল্প পরিমাণের বরাদ্দে এই অর্থ কর্তনের কথা স্বীকার করে শ্রীরামপুর ইউনিয়নের কামারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিলুফার ইয়াছমিন কেয়া জানান, আপনি জসিমকে বলেন, তাকে ফাইলও দিয়েছি টাকাও দিয়েছি। তিনি আর মধ্য ইসলামপুরের মতিয়ার স্যারসহ একসঙ্গে ১ হাজার করে দেয়ার কথাও জানান ওই বিদ্যালয় প্রধান। একইভাবে বাউরা ইউনিয়নের নবীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হরিদয়াল রায় জানান, মিটিংয়ের পরের দিনই অফিসের জসিমের কাছে কাগজসহ ১ হাজার দিয়েছি। টাকা নেওয়ার বিষয়টি অধিকাংশ বিদ্যালয় প্রধান স্বীকার করেন। তারা মুলত হয়রানি থেকে বাঁচতে এমনটা বাধ্য হয়ে করেন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন শিক্ষক তা অবগত করেন।
এদিকে এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে সরল স্বীকারোক্তি দিয়ে শিক্ষা অফিসের অফিস সহায়ক জসিম আলী প্রায় ৩০ টি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে ১ হাজার করে নিয়েছেন জানিয়ে বলেন, আপনাকে মিথ্যা কথা বলবো না, অফিসারও চায়। চাইলে তালিকা দেখাতে পারি। এখান থেকে তিনিও নিয়েছেন কিছু টাকা। স্যার বলেন যে, আর বাকিটা ওখানেও দেবো, চা মিষ্টিও খাবো। জসিম আরও জানান, এই টাকা মুলত হিসাবরক্ষণ অফিসেও দিতে হয়। সেখানকার অফিস অডিটর বাবু টাকা ছাড়া ফাইলের কাজ করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। যদিও এভাবে টাকা তুলতে অপারগতা প্রকাশ করে মাফ চাইলেও চাকরি বাঁচানোর স্বার্থে অফিসারের কথা মতো কাজ করতে হয় বলেও অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন জসিম।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জ্যোতির্ময় সরকারের কাছে জানতে চাইলে, তার বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার ও জমিস কর্তৃক অর্থ কর্তনের আদেশের কথা অস্বীকার করে বলেন, যে দিয়েছে সে অপরাধী, যে নিয়েছে সেও অপরাধী। সে নিজে বাঁচতে, স্যারের (আমার দোষ) দোষ দিয়েছে। মনে করেন আপনি ভাউচারগুলো নেবেন, ওয় (জসিম) ভাউচার ফটোকপি করবে, লিখবে দুটো কলম, তাতে যদি আপনি ১শ টাকা (খুশি করে) দেন, সেটা যদি বলেন আপনি কয়া (বলে দেয়া/নির্দেশ) দিছেন। এখন স্যারেরা যদি দেয় তাহলে কিছু করার নাই।
এ দিকে উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের অডিটর মাহফুজার রহমান বাবুর বিরুদ্ধে করা অভিযোগ তিনি সম্পুর্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে এবিষয়ে বিস্তারিত কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাস বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।
উল্লেখ্য, এর আগেও উপজেলা শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা, আচরণে ত্রুটি, কর্মস্থলে সপ্তাহের বেশির ভাগ সময় অনুপস্থিত থাকা, অসংলগ্ন কথাবার্তা, শিক্ষকের ফাইল দিনের পর দিন টেবিলে ফেলে রাখাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও তার চাপে অফিসের একাধিক কর্মচারী অসুদপায় অর্থ গ্রহণে বাধ্য হয়ে থাকেন, যেমনটা জমিসের কাছ থেকে পাওয়া ভাষ্য অনুযায়ী কয়েকজন শিক্ষকের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে মিল পাওয়া যায়।