এবি সিদ্দিক, পাটগ্রাম (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি।।
স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রসবকালীন গাফিলতির কারণে ঝর্ণা রাণী (৩০) নামে এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম জোংড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকা চিনু বালা রায় ও আয়া রত্না রাণীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, নীলফামারী জেলার ডিমলা থানার চাপানি গ্রামের রাম দয়াল রায়ের মেয়ে ঝর্ণা রাণীর সাথে ১০ বছর আগে পাটগ্রাম উপজেলার জোংড়া ইউনিয়নের নিরঞ্জন রায়ের বিয়ে হয়। নিরঞ্জন ও ঝর্ণা দম্পত্তির ৮ বছরের এক কন্যা সন্তান রয়েছে। উপজেলার একাধিক ডায়াগনস্টিকে গর্ভ সংক্রান্ত আলট্রাসনোগ্রাম করে বাচ্চার অবস্থান ও শারীরিক অবস্থা ভালো থাকায় অনেকটা দুশ্চিন্তামুক্ত থাকে গর্ভবতী ঝর্ণা রাণীর স্বামী নিরঞ্জন। গত ০৮ জুন/ ঈদের পরদিন বেলা ১২ টায় প্রসবজনিত কারণে বাড়ির পাশে জোংড়া মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে যায়। কেন্দ্রের আয়া রত্না রাণী নরমাল সন্তান প্রসব হবে জানিয়ে পরিদর্শিকা চিনু বালা রায়কে খবর দেন। চিনু বালা ২ ঘন্টা পর এসে প্রসূতির প্রসবজনিত ব্যথা না থাকায় ইনজেকশন ও নানান ওষুধ প্রয়োগ করে। এতে বিকেল ৫ টার দিকে ছেলে সন্তান প্রসব করেন ঝর্ণা। ২ ঘন্টা পর শিশুসহ প্রসূতিকে নিয়ে যেতে বলে পরিদর্শিকা ও আয়া। পরবর্তীতে ৩ ঘন্টা পরও প্রসূতিকে ছেড়ে না দিলে সন্দেহ হয় প্রসূতির স্বামী নিরঞ্জনের। একপর্যায়ে পরিদর্শিকা ও আয়া প্রসূতির স্বজনদেরকে জানায়, প্রসূতির বমি ও রক্তক্ষরণ হচ্ছে। চেষ্টা করে বন্ধ করা যায়নি। এতে শরীরের অবনতি ঘটে ঝর্ণার। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রসূতির অবস্থা মূমূর্ষ জানিয়ে দ্রুত রংপুরে নিতে বলেন। পরবর্তীতে রংপুরের একটি বেসরকারি (ডক্টরস কমিউনিটি হাসপাতাল) হাসপাতালের আইসিইউতে দুইদিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মারা যান ঝর্ণা রাণী।
এই ঘটনা জানাজানি হলে সরেজমিনে বৃহস্পতিবার (১২ জুন) গিয়ে দেখা যায়, ৮ বছরের কন্যা এক সন্তান ও তিনদিনের ছেলে সন্তানকে নিয়ে স্ত্রীর শোকে স্তব্ধ স্বামী নিরঞ্জন রায় (৩৫)। তিনি অভিযোগ করে বলেন, 'আমার স্ত্রীর প্রসবের সময় ওরা (পরিদর্শিকা ও আয়া) অনেক অবহেলা করেছে। ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পাশে আমার জুয়েলারী দোকান। আমার বন্ধু ও পাশের দোকানদারেরাসহ বার বার গিয়ে বলেছি যদি না পারেন বা কোনো সমস্যা হলে ছেড়ে দেন। ওনারা শুধু টালবাহানা করে বলে এটা ওষুধ আনেন, ওটা আনেন এভাবে রাত ১২ টা পর্যন্ত করে। রোগীর বারোটা বাজিয়ে পরে তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যেতে বলেন। ওখানে নিয়ে গেলে উনারা জানায় আপনার রোগীর অবস্থা খুব খারাপ। জরুরীভাবে রংপুর নিয়ে যান। রংপুরের চিকিৎসক জানায় প্রসূতির প্রসব করানোর সময় ভেতরের অবস্থা খুব খারাপ করা হয়েছে। নার ছিরে গেছে। এ কারণে রক্তক্ষরণ ও বমি বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। এতে জীবন বিপন্ন হয় প্রসূতির। আমরা ৭ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করে স্ত্রীর শরীরে দেই। কিন্তু আমার দুই শিশু সন্তান মা হারা হলো। আমার জীবন শেষ করে দেওয়া হল। অবশ্যই এ ঘটনার তদন্ত করে গাফিলতিকারীদের শাস্তি হওয়া দরকার।’
এ ঘটনায় আয়া রত্না রাণী বলেন, ‘ওই প্রসূতির অবস্থা ভালো ছিল। বিকেলে ছেলে সন্তান স্বাভাবিকভাবে প্রসব করে। কোনো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা ছিলনা। প্রসবের কিছু সময় পর বমি হলে, ওষুধ খাওয়ানো হয়। তবে উনার বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা ছিল, আমাদেরকে তার পরিবার বলেনি।’ পরিদর্শিকা (এফডাব্লিউভি) চিনু বালা রায় বলেন, ‘উপজেলার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে ওষুধ ও ইনজেকশন দেওয়া হয়। জোরজুলুম করে প্রসব করানো হয়নি। কোনো গাফিলতিও করা হয়নি।’
পাটগ্রাম মেডিকেল অফিসার ও উপজেলা পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ডাঃ খুরশিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনা জেনেছি। প্রসবকালীন কোনো গাফিলতি হয়েছে, মনে হচ্ছেনা। ছুটিতে আছি। ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রসূতির মৃত্যু ও প্রসবের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়ে খতিয়ে দেখা হবে।’
প্রকাশক ও সম্পাদক : জিল্লুর রহমান
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত