নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
আবহমান গ্রামবাংলার হৃদয়জুড়ে একসময় দাপিয়ে বেড়াতো যে ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলো, তার অনেকটাই আজ সময়ের স্রোতে হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে লালমনিরহাটে এখনো সেই হারানো গৌরবকে ফিরে পাওয়ার এক চমৎকার প্রয়াস দেখা যায়। বৈশাখের রঙে রঙিন হয়ে ওঠা এই শহরে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-কে ঘিরে আয়োজিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা, যা পরিণত হয়েছে হাজারো মানুষের মিলনমেলায়।
প্রতি বছরের মতো এবারও এই আয়োজনের নেতৃত্বে ছিলেন লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) লালমনিরহাটের মানুষের প্রিয় নেতা অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু। তারই উদ্যোগে বড়বাড়ি শহীদ আবুল কাশেম মহাবিদ্যালয় মাঠে চার দিনব্যাপী এই খেলা প্রতিযোগিতা শুরু হয় ১৪ এপ্রিল বিকেলে। ঘোড়াদৌড়ের পাশাপাশি আয়োজন করা হয়েছে দাড়িয়াবান্ধা, চকরচাল, ঠুস, ঘুড়ি উড়ানো ও সাঁতারের মতো হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ খেলাধুলারও।
মাঠজুড়ে উৎসবের রঙ ছড়িয়েছে প্রতিটি কোনায়। সাজানো হয়েছে ছোট মেলা, যেখানে গ্রামীণ খাবার ও খেলনার পসরা নিয়ে বসেছে দোকানীরা। শিশুদের জন্য রয়েছে নাগরদোলা ও ট্রেন রাইড। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে মানুষের মনোযোগ ছিল ঘোড়দৌড় ঘিরেই। মাঠে জমেছে হাজারো দর্শকের ভিড়—নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ—সবাই মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করছে প্রতিটি মুহূর্ত।
প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ঘোড়ার সওয়ারিরা এসেছে টগবগিয়ে খুরের শব্দ তুলে, রঙিন পালকে সজ্জিত বাহারি ঘোড়া নিয়ে। শুধু খেলা দেখতে লালমনিরহাট ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী জেলা থেকেও ছুটে এসেছেন হাজারো মানুষ। অনেকেই এসেছেন আগের দিন, আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে থেকে পরদিন খেলা উপভোগ করতে।
প্রথম দিনের প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ৩২টি ঘোড়া। দর্শকদের মধ্যে সবার নজর ছিল ১২ বছরের কনিষ্ঠ প্রতিযোগী হালিমা বেগমের দিকে, যিনি নাটোর থেকে বাবার সঙ্গে এসে প্রথম স্থান অর্জন করে তাক লাগিয়ে দেন সবার।
ঘোড়াদৌড় দেখতে আসা বিভিন্ন দর্শকের প্রতিক্রিয়ায় ফুটে ওঠে আবেগ ও গর্ব। কেউ এসেছেন পাটগ্রাম থেকে, কেউবা বুড়িমারী কিংবা নাটোর থেকে। সকলের কণ্ঠে ছিল একটাই আকাঙ্ক্ষা—এমন আয়োজন যেন প্রতি বছর হয়, যেন হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যগুলো নতুন প্রজন্মের কাছে জীবন্ত হয়ে ওঠে।
শিক্ষার্থী কাইয়ুম বলেন, "নিজ গ্রামে ঘোড়দৌড় দেখে খুবই আনন্দিত। এমন আয়োজন আমাদের সংস্কৃতিকে জীবন্ত রাখে।"
অন্যদিকে, ছোট্ট সওয়ারি হালিমা বেগম বলেন, "আমি নাটোর থেকে এসেছি বাবার সঙ্গে। এখানকার দর্শকদের উল্লাস দেখে সত্যিই ভালো লেগেছে। এমন আয়োজনের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাই।"
সবশেষে আয়োজক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, “এই আয়োজনের উদ্দেশ্য শুধু বিনোদন নয়, বরং আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা এবং একটি মাদকমুক্ত সমাজ গড়ে তোলার প্রয়াস।”
চার দিনের প্রতিযোগিতার শেষ দিনে অনুষ্ঠিত হবে চূড়ান্ত পর্ব। বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে পুরস্কার, আর দর্শকদের মনে গেঁথে থাকবে চিরায়ত বাংলার এক প্রাণবন্ত আয়োজন।
প্রকাশক ও সম্পাদক : জিল্লুর রহমান
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত